ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে হেফাজতপন্থিদের হামলা, দইজনের মৃত্যু

মুহাম্মাদ হুজাইফা

মুহাম্মাদ হুজাইফাঃ  টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ আজ বুধবার জানিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে টঙ্গী হাসপাতালে। আর অন্যজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। আমরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০) নামের এক ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে এব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন মাওলানা সাদ-এর অনুসারিরা। ঘটনায় আহত অবস্থায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেন মোট ৩৯ জন। এর মধ্যে ১১ জনকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র নার্স মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আজ ভোর সাড়ে চারটা থেকে আহত অবস্থায় লোকজন আমাদের হাসপাতালে আসতে থাকেন। এর মধ্যে একজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়। আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।’

সংঘর্ষে তাইজুল ইসলাম নামের আরেক মুসল্লি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মাওলানা সাদের অনুসারীর গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম। তিনি বলেন, তাইজুলের বাড়ি বগুড়ায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে আগে থেকেই পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার কথা মাওলানা সাদের অনুসারীদের। হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা তাঁদের এখানে ইজতেমা করতে দিতে চান না। এ জন্য আগে থেকে ইজতেমা মাঠ দখলে নেন হেফাজতপন্থি জুবায়ের অনুসারীরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চারদিক থেকে মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন সাদের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে মাঠ ছেড়ে দেন জুবায়ের অনুসারীরা।

ঢাকার বাদামতলী এলাকার তাবলিগ জামাতের সাথি ও হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা সাথি মুরব্বিদের নির্দেশনা মোতাবেক গেটে পাহারা দিচ্ছিলাম। কোনো কোনো সাথি পালা বদল করে ঘুমাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদ অনুসারীরা বিদেশি খিত্তার (কামারপাড়া সেতুর গোড়া) পাশ দিয়ে হাতে লাঠি, রডসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁরা মূল গেট (৬ নম্বর) দখলে নেন। এরপর দলে দলে চারদিক থেকে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’

তবে ভিন্ন কথা বলছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা। মাওলানা সাদের অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘রাতে মাঠে ঢোকার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে আমাদের সাথিরা আসছিলেন। কিন্তু জুবায়ের অনুসারীরা রাস্তার বিভিন্ন অংশে আমাদের সাথিদের বাধা দেন, মারধর করেন। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পুলিশও আসে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা থামছিলেন না। এদিকে আমাদের অনেক সাথি আসতে থাকায় ইজতেমা মসজিদে জায়গা না পেয়ে কামারপাড়া ব্রিজ ও রাস্তার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে হঠাৎ অনবরত ঢিল ছুড়তে থাকেন হেফাজতপন্থি জুবায়ের অনুসারীরা। পরে আমাদের সাথিরা বাধ্য হয়ে মাঠে প্রবেশ করেন।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেট সময় ১২:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
৫৯ বার পড়া হয়েছে

টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে হেফাজতপন্থিদের হামলা, দইজনের মৃত্যু

আপডেট সময় ১২:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মুহাম্মাদ হুজাইফাঃ  টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ আজ বুধবার জানিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে টঙ্গী হাসপাতালে। আর অন্যজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। আমরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০) নামের এক ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে এব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন মাওলানা সাদ-এর অনুসারিরা। ঘটনায় আহত অবস্থায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেন মোট ৩৯ জন। এর মধ্যে ১১ জনকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র নার্স মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আজ ভোর সাড়ে চারটা থেকে আহত অবস্থায় লোকজন আমাদের হাসপাতালে আসতে থাকেন। এর মধ্যে একজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়। আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।’

সংঘর্ষে তাইজুল ইসলাম নামের আরেক মুসল্লি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মাওলানা সাদের অনুসারীর গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম। তিনি বলেন, তাইজুলের বাড়ি বগুড়ায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে আগে থেকেই পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার কথা মাওলানা সাদের অনুসারীদের। হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা তাঁদের এখানে ইজতেমা করতে দিতে চান না। এ জন্য আগে থেকে ইজতেমা মাঠ দখলে নেন হেফাজতপন্থি জুবায়ের অনুসারীরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চারদিক থেকে মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন সাদের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে মাঠ ছেড়ে দেন জুবায়ের অনুসারীরা।

ঢাকার বাদামতলী এলাকার তাবলিগ জামাতের সাথি ও হেফাজতপন্থি মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা সাথি মুরব্বিদের নির্দেশনা মোতাবেক গেটে পাহারা দিচ্ছিলাম। কোনো কোনো সাথি পালা বদল করে ঘুমাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদ অনুসারীরা বিদেশি খিত্তার (কামারপাড়া সেতুর গোড়া) পাশ দিয়ে হাতে লাঠি, রডসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁরা মূল গেট (৬ নম্বর) দখলে নেন। এরপর দলে দলে চারদিক থেকে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’

তবে ভিন্ন কথা বলছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা। মাওলানা সাদের অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘রাতে মাঠে ঢোকার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে আমাদের সাথিরা আসছিলেন। কিন্তু জুবায়ের অনুসারীরা রাস্তার বিভিন্ন অংশে আমাদের সাথিদের বাধা দেন, মারধর করেন। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পুলিশও আসে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা থামছিলেন না। এদিকে আমাদের অনেক সাথি আসতে থাকায় ইজতেমা মসজিদে জায়গা না পেয়ে কামারপাড়া ব্রিজ ও রাস্তার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে হঠাৎ অনবরত ঢিল ছুড়তে থাকেন হেফাজতপন্থি জুবায়ের অনুসারীরা। পরে আমাদের সাথিরা বাধ্য হয়ে মাঠে প্রবেশ করেন।’